বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : রবিবারই ফোনে কথা বলার সময় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে তিনি কলকাতায় আসবেন। কলকাতায় তাঁর কর্মসূচি কী, সে বিষয়ে অবশ্য বিস্তারিত কিছু জানাননি। এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজির জন্মদিনকে ‘জাতীয় ছুটি’ ঘোষণা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ফের দাবি জানালেন। এর আগে নভেম্বর মাসেও নেতাজির জন্মদিনকে ‘জাতীয় ছুটি’ হিসাবে ঘোষণা করার দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন তিনি। যদিও এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি। পাশাপাশি ২৩ জানুয়ারি দিনটি ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসাবে পালন করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
এ বছর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫–তম জন্মদিন। তাই সারা বছর ধরেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেতাজিকে স্মরণ এবং তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে। সোমবার নেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে নবান্নে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে ছিলেন নেতাজির পৌত্র সুগত বসু, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, ফেলিক্স রাজ, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সুগত বসু, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, ব্রাত্য বসু, যোগেন চৌধুরি, শুভাপ্রসন্ন, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার প্রমুখ। উল্লেখ্য, শুধু রাজ্য সরকার নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মদিন উপলক্ষে সারা বছর ধরে ভাবগম্ভীর ভাবে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ২২ ডিসেম্বর নেজাতির জন্মজয়ন্তী উদ্যাপনে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরির কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, নেতাজির পরিবারের সদস্য, বিশেষজ্ঞ, ইতিহাসবিদ, লেখক এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে জড়িত থাকা ব্যক্তিরাও ওই কমিটিতে থাকবেন।
সোমবার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে হওয়া ভার্চুয়াল বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের তরফে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘২৩ জানুয়ারি পালিত হবে ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসেবে। ওইদিন বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে (নেতাজির জন্মসময়) রাজ্য জুড়ে সাইরেন বাজানো হবে। দুপুর সওয়া বারোটায় শ্যামবাজার থেকে রেড রোড পর্যন্ত মিছিল করা হবে। সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে মিছিল শুরু হবে। মিছিলে আমিও থাকব। থাকবে পুলিশের ব্যান্ডও।’ সেই সঙ্গে ওই সময় বাড়ি বাড়ি শঙ্খধ্বনি এবং উলু দেওয়ার জন্য রাজ্যবাসীর কাছে আবেদনও জানিয়েছেন মমতা। বৈঠকে তাঁর প্রস্তাব মেনে যে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলি হল নেতাজির জীবন নিয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্যের সিনেমা তৈরি হবে। এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুগত বসুকে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হবে ‘আজাদ হিন্দ বাহিনী’। ২৬ জানুয়ারি এবং ১৫ অগস্ট নেতাজিকে সম্মান জানিয়ে বিশেষ কুচকাওয়াজ হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২৬ জানুয়ারির প্যারেডে নেতাজিকে উৎসর্গ করে থাকবে একটি বিশেষ ট্যাবলো। আজাদ হিন্দ ফৌজের নামে বিশেষ ব্যান্ড বের করবে কলকাতা পুলিশ। ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের প্যারেড এবার সম্পূর্ণ উৎসর্গ করা হবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে।’
তাঁর নামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হবে বলেও জানিয়েছেন। কেন্দ্রকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় আমরাই করব। কারও কাছে টাকা চাইব না, ভিক্ষা চাইব না।’ তৈরি হবে মনুমেন্টও। তিনি বলেন, ‘নেতাজির নামে মনুমেন্ট করা হবে। সেটা রাজারহাটের দিকে হতে পারে। তার নাম হবে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ মনুমেন্ট।’ ১৯৩৮ সালে প্ল্যানিং বা পরিকল্পনা কমিশন তৈরি করেছিলেন নেতাজি। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে এদিন কেন্দ্রের ‘নীতি আয়োগ’–কে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, ‘আমরা বাংলা প্ল্যানিং কমিশন শুরু করব। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করবে এই কমিশন। কেউ মানবে, কেউ মানবে না। তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।’ নেতাজির জন্মবার্ষিকী পালনে শিশু ও যুব সম্প্রদায়কে কীভাবে আকৃষ্ট করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাব দেন, অলচিকী, পাহাড়ি–সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় নেতাজিকে নিয়ে বই প্রকাশ করা হবে। বৈঠকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ‘তরুণের স্বপ্ন’ বইটি সব ভাষায় অনুবাদ করার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী।